ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও পরমাণু বিজ্ঞানী এ.পি.জে. আব্দুল কালাম যে ছোটবেলা কাটিয়েছে অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে। তার বাবা ছিলেন একজন নৌকার মাঝি আর মা ছিলেন গৃহবধূ খুব গরিব পরিবারের ছেলে আব্দুল কালাম। পরিবারের দারিদ্রতা বার বার তার পড়ালেখার পথে বাঁধা হয়ে দারিয়ে ছিলো তাই খুব অল্প বয়সেই তিনি জীবিকা অর্জনের জন্য বিভিন্ন পেশায় কাজ করতে হয়। এমন কি স্কুল ছুটির পরে তিনি খবরের কাগজ বিক্রি করতেন এবং অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে তিনি নিজের পড়ালেখা চালিয়ে গিয়েছেন। পরে তিনি Josephs college ভর্তি হয়ে সেখান থেকে গ্রাজুয়েট কমপ্লিট করেন এর পরে তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেন।
১৯৫০ সালে মাদ্রাস ইন্সিটিউট অফ টেকনোলজি কলেজে ভর্তি হবার মেধা লিস্টে নাম উঠে ঠিকই কিন্তু সেখানে ভর্তি হওয়ার ফি ছিলো হাজার টাকা যা সেই মুহূর্তে তার কাছে ছিলো না! কিন্তু তার মা ও বোন তাদের সোনার গহনা বিক্রি করে দিয়ে তার ভর্তি ফি যোগার করেন। তার লেখাপড়ার প্রতি পরিবারের গভীর মনোভাব দেখে কালাম লেখাপড়ার প্রতি আরো মনযোগী হয়ে পরে। কলেজের কিছু প্রোজেক্টে তার খুব আগ্রহ দেখে একজন প্রোফেসর তাকে সিনিয়র ক্লাস প্রোজেক্টের দায়িত্ব দেয় কিন্তু সে সেটিতে ভাল করতে পারে না পরে স্যার তার উপরে রেগে বলে ৩ দিনের মধ্যে কাজটা না করতে পারলে তার মেধা বৃত্তি ফিরিয়ে নিবে। অবশেষে কালাম সেটি করে এবং স্যার কে খুশি করেন। এর পরে তার জীবনে আসে এক নতুন অধ্যায় একদিকে আসে এয়ারফ্রোস ও অন্য দিকে আসে ডিফেন্স তিনি দুটিতেই যাবার সিদ্ধান্ত নেয়। ডিফেন্স এর ইন্টার্ভিউ দিয়ে এয়ারফ্রোসে আসেন কিন্তু ২৫ জনের মধ্যে তিনি ৯ম স্থান অধিকার করে যেখানে লোক নেওয়ার কথা ৮ জন। ফলে তিনি বাতিল হয়ে পাইলটের স্বপ্ন হারিয়ে ফেলে পরে তিনি খুব দুঃখ কষ্ট নিয়ে একজন স্বামীজির কাছে যান এবং মনের সকল কথা বলেন স্বামীজি তাঁকে বলেন, ইচ্ছা যদি হয় মন থেকে তাহলে সেটায় আলাদা একটা জোর থাকে। স্বপ্ন দেখে সেটার বাস্তবে রূপ দিতে অনেক কষ্টের যা সবাই পারে না কিন্তু অবিরাম তার পিছনে ছুটে চল্লে অবশ্যই বাস্তব হয়। এর পরে তিনি দিল্লিতে গিয়ে ইন্ডিয়ান ডিফেন্স মিনিস্ট্রিতে সিনিয়র সায়েন্টিস হিসাবে কাজ করেন।
১৯৬৯ সালে তিনি স্পেস রিস্রোস অর্গানাইজেশন ইস্রতে বদলি হয়ে আসেন পরে তিনি SLV3 নামে একটি Satellite তৈরির হেড হিসাবে কাজ করেন। কিন্তু ১৯৮৯ সালে SLV3 Satellite মহাকাশে পাঠানোর ৩১৭ সেকেন্ডের মধ্যে ভেজ্ঞে যায়। তখন কালাম কে অনেক কঠিন সময়ের সম্মুখীন হতে হয় যার ফলে তিনি কিছু দিন মানশিক ভাবে ভেজ্ঞে পরেন। এর পরে যখন কালাম প্রেস কনফারেন্সে তার Satellite ভাজ্ঞার কারন বলছিল তখন প্রোফেসর সতিশ ধাওয়ান তার থেকে মাইক্রোফোন নিয়ে মিডিয়ার সকল প্রশ্নের উত্তর দেয় এবং এগুলো খুব জটিল মিশন এর কোথায় ভুল ছিল সেটা আমাদের কেই খুজে বের করতে হবে লক্ষ্য রাখতে হবে যে আর যেন এই রকম ভুল না হয়। আমার বিশ্বাস আছে আমরা সফল হতে পারব এবং ১ বছর পরেই আবার মহাকাশে Satellite পাঠাতে সক্ষম। Satellite যখন তৈরি করছিল তখন তাঁকে অনেকেই SLV3 Satellite ভাজ্ঞার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল কিন্তু সে নিজের মতো করে কাজটা করে গিয়েছেন যার জন্য সে সফল হয়েছেন। 18th-july-1980 Satellite মহাকাশে পাঠতে সফল তিনি।
এর পরে তিনি ১৯৯৮ সালে পরমাণু তত্ত্বের কিছু সফল গবেষণা করেন এই সময় দেশের প্রধানমন্ত্রী তাঁকে মন্ত্রীর পদ দিতে চাইলে সে প্রত্যাখ্যান করেন এবং তিনি নিজের যোগ্যতায় রাষ্ট্রপতি পদ পায়। ২০০৭ সালে তিনি সম্মানের সাথে রাষ্ট্রপতি পদ ত্যাগ করেন এবং ২০১৫ সালে পরলোক গমন করেন।**গল্প থেকে আমরা কী শিখতে পারলাম? যে মানুষটা ছোট বেলা থেকে লেখাপড়ার মাঝে পরিবারের হাল ধরতে সংবাদপত্র বিক্রি করেছেন কারন তার পড়ার পথে দারিদ্র বাঁধা হয়ে দারিয়ে ছিলো হাজারও কষ্ট ভরা রাস্তা পেরিয়ে তিনি আজকে সফল।
একটা মানুষের কতটা ইচ্ছা শক্তি থাকলে জীবনে সফল হওয়া যায় এটাই তার বাস্তব উদাহরণ। জীবনে কিছু করতে হলে অনেক কিছু কে ত্যাগ করতে হয় তাই সকল দুঃখ কষ্টকে একটা শিক্ষা হিসাবে গ্রহণ করতে হবে আমাদের। হোক সেটা অনেক বড় বা ছোট, দুঃখ কিন্তু দুঃখই। ভাই দুই দিনের জীবনে সাবাইকে ক্ষমা করতে শিখুন, সবার শুনাম করতে শিখুন। আপনাকে যেকোনো সময় যে কোন পরিবেশে পরতে হতে পারে তার জন্য হাল না ছেড়ে কাজটা কে ভালবাসুন।
0 Comments